শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

অঘোষিত ধর্মঘটে আশুলিয়ায় শ্রমিক দুর্ভোগ চরমে

অঘোষিত ধর্মঘটে আশুলিয়ায় শ্রমিক দুর্ভোগ চরমে

স্বদেশ ডেস্ক:

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে সাভারে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। আজ শনিবার সকাল থেকেই পরিবহন না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন তারা। শেষমেষ যে যেভাবেই পেরেছেন সময়মতো হাজিরা দিতে পড়িমড়ি করে রিকশা-ভ্যানে উঠে কর্মস্থলে ছুটে গেছেন। প্রায় ১০ লাখের বেশি শ্রমিক অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চল সাভার আশুলিয়ায় বাস করে।

এর আগে গত বুধবার (০৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। এরপরই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন।

সকালে সাভার আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের ঢাকা-আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই পরিবহনের অপেক্ষায় থাকা শ্রমিকদের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে জটলা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন শ্রমিক থেকে শুরু করে অফিসগামীরাও। রিকশা, ভ্যানগুলোতে বাড়তি ভাড়া দিয়েও সময়মতো অনেকেই পৌছুঁতে পারেননি অফিসে। হাজিরা কাটার আশঙ্কায় শ্রমিকদের অনেকেই চরম দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। মহাসড়ক কার্যত ছিল ইজিবাইকের দখলে।

রেডিও কলোনিতে পরিবহনের জন্যে অপেক্ষমাণ তৈরি পোশাক শ্রমিক বিউটি আক্তার বলেন, ‘বড় লোকেরা তো নিজেগো গাড়ি কইরাই অপিসে যাইতাছে। কিন্তু আমাগো কষ্ট বুঝে না কেউ। যদি দেরি হয় তাইলে মালিক হাজিরা কাটবো। আবার দেহেন, ৫০ টাহার (টাকার) ভাড়া চাইতাছে দেড়শ’ টাকা। আমাগো বেতন তো আর বাড়বো না। অহন বাড়তি ভাড়া দিয়া টাকাগিলা ফুরাইতাছে। মাস শ্যাষে কি দিয়া সংসার চালামু তা খোদাই জানে।’

একই কথা বলছিলেন ঝর্ণা আক্তার নামের আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘যত মুসকিল সব খোদা আমাগো কপালে লেইখ্যা রাখছে। সামান্য যে কয়ডা টাকা বেতন পাই তা দিয়াই টানাটানি। তার ওপর বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম! এত কিছুর পর নিশ্চয়ই গাড়ি ভাড়াও বাড়াইবো। তাহলে আমরা চলমু কেমনে?’

ঢাকার মতিঝিলে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন সাব্বির হোসেন। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই দেশে সবাই যে যার জায়গায় রাজা। আমরা সাধারণ প্রজা হিসেবেই কেবল কষ্ট করে গেলাম।’ তিনি বলেন, ‘তেলের দাম বাড়বে ভালো কথা। কিন্তু সরকার কি পারতো না একটু সমন্বয় করে দাম বাড়ানো ঘোষণা দিতে। কিন্তু দেখেন, আজ দুদিন ভেঙ্গে ভেঙ্গে মতিঝিল যাচ্ছি। একে তো বাড়তি অর্থ খরচ তার ওপর ভোগান্তি। এসব করে যে সাধারণ মানুষের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে তা যেন দেখার কেউ নেই।’

এদিকে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন ইজিবাইক চালকরা। ৫০ টাকার ভাড়া তারা হাঁকছেন দেড়’শ থেকে ২’শ টাকা।

এ ব্যাপারে ইজিবাইক চালক রফিকুল জানান, আগে তিনি পাড়া মহল্লায় ইজিবাইক চালাতেন। গত দুদিন ধরে তার যাত্রীর পাশাপাশি আয়ও বেশ। তিনি জানান, যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। সবাই বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে তিনিও নিচ্ছেন।

চরম ভোগান্তিতে দীর্ঘক্ষণ ধরে পরিবহনের অপেক্ষায় ছিলেন মিডফোর্ড হাসপাতালের উদ্দেশে বের হওয়া সাংস্কৃতিক কর্মী আফজাল হোসেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন,এই দেশে কত শত রাজনৈতিক দল আর তাদের নেতাকর্মী। আজ দেখেন সাধারণ মানুষ কত দুর্দশায় আছে। কিন্তু সবাই যেন ঘুমিয়ে। বড়ই আজব দেশ- মন্তব্য করে রিকশায় যাবার জন্যে ভাড়া দরদাম করেন তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877